SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

পদার্থবিজ্ঞান (পুরোনো সংস্করণ) - আলোর প্রতিসরণ (Refraction of Light) - লেন্স ও তার প্রকারভেদ(Types of Lenses)

আমরা উত্তল এবং অবতল আয়না পড়ার সময় দেখেছি এই আয়নাগুলোর ভেতর দিয়ে আলো যাবার সময় কখনো একবিন্দুতে কেন্দ্রীভূত (অভিসারী রশ্মি) হয় আবার কখনো ছড়িয়ে পড়ে (অপসারী রশ্মি) এবং সে কারণে প্রতিবিম্বের তৈরি হয়। সেই প্রতিবিম্ব কখনো সত্যিকারের প্রতিবিম্ব হয় কখনো অবাস্তব হয়। কখনো ছোট হয় কখনো বড় হয়। আলোর এই প্রতিবিম্বকে নানাভাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপটিক্যাল যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়ে থাকে। 

উত্তল এবং অবতল আয়না দিয়ে যে রকম নানা ধরনের প্রতিবিম্ব তৈরি করা হয় ঠিক সে রকম লেন্স দিয়েও নানা ধরনের প্রতিবিম্ব তৈরি হয় এবং নানাভাবে সেগুলো ব্যবহার হয়। আমরা সবাই লেন্স দেখেছি (তার কারণ চশমার কাচগুলো আসলে এক ধরনের লেন্স)। তোমাদের মাঝে যারা চশমা ব্যবহার করো কিংবা যারা অন্যদের চশমা ব্যবহার করতে দেখেছ তারা নিশ্চিতভাবেই লক্ষ করেছ যে চশমার লেন্সকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক ধরনের পেল দিয়ে ছোট জিনিসকে বড় দেখা যায়। (সাধারণত বয়স্কদের চশমার লেন্স এ রকম হয়।} আবার অন্য ধরনের লেন্স দিয়ে বড় জিনিসকে ছোট দেখা যায় (সাধারণত কম বয়সীদের চশমার লেন্স এ রকম হয়)। যে লেন্স দিয়ে ছোট জিনিসকে বড় দেখা যায় সেগুলোকে উত্তল (convex) কিংবা (কদাচিৎ) অভিসারী লেন্স বলে। যে লেন্স দিয়ে বড় জিনিসকে ছোট দেখা যায় সেই লেন্সগুলোকে অবতল লেন্স (concave) কিংবা কদাচিৎ) অপসারী লেন্স বলে। যে লেন্স দিয়ে ছোট জিনিসকে বড় দেখা যায় অর্থাৎ উত্তল লেন্সগুলোর মাঝখানের অংশ প্রান্ত থেকে পূর্ব্ব হয়। আর অবতল লেলগুলোর মাঝখানের অংশ প্রান্ত থেকে সরূ হয় 9.14 চিত্রটিতে যে রকম দেখানো হয়েছে। লেন্সের প্রস্থচ্ছেদের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি উত্তল কিংবা অবতল লেন্সের দুটিই দুটি গোলীয় বৃত্ত দিয়ে সীমাবদ্ধ। এই দুটি গোলীয় বৃত্তের ব্যাসার্ধ সমানও হতে পারে ভিন্নও হতে পারে। এই বৃত্তগুলোর কেন্দ্রকে বক্রতার কেন্দ্র বলে।

দৈনন্দিন জীবনে বা বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে নানা ধরনের লেন্স ব্যবহার করা হয়। তবে আমরা আমাদের এই বইয়ে আমাদের আলোচনা পাতলা লেন্সের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখব। পাতলা লেন্স এবং পুরু লেন্সের পার্থক্য নামকরণ থেকেই বোঝা গেলেও আমরা পার্থক্যটুকু আরেকটু পরিষ্কার করে নিই। লেন্সের প্রস্থচ্ছেদের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যদিও লেন্সের পৃষ্ঠদেশের এক ধরনের বক্রতা আছে কিন্তু ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় দুটি পৃষ্ঠ প্রায় সমান্তরাল। আমরা জানি সমান্তরাল পৃষ্ঠ দিয়ে আলো যাবার সময় প্রতিসরণের কারণে আলোক রশ্মিটি মূল দি থেকে খানিকটা বিচ্যুৎ হয়ে যায়। চিত্র 9.16)

সমান্তরাল পৃষ্ঠ দুটি যত পুরু হবে আলোক রশ্মিটি মূল রশ্মির দিক থেকে তত বেশি সরে যাবে। যদি সমান্তরাল পৃষ্ঠ দুটি খুব কাছাকাছি বিচ্যুত হয়। হয় তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি মূল আলোক রশ্মি যে দিক দিয়ে এসেছে মোটামুটি সেদিক দিয়েই বের হয়েছে, তার কোনো বিস্তৃতি হয়নি। যেসব লেন্সের বেলায় তার কেন্দ্র দিয়ে আলোক রশ্মি যাবার সময় ধরে নেওয়া যায় যে রশ্মিটির দিক অপরিবর্তিত আছে সেই সব লেন্সকে পাতলা লেন্স বলে। কিংবা একটু অন্যভাবে বলতে পারি পাতলা লেন্সের মাঝখানের যে বিন্দু দিয়ে আলোক রশ্মি যাবার সময় বেঁকে যায় না সেটি হচ্ছে লেন্সের কেন্দ্র বা লেন্সের আলোকীয় কেন্দ্র (Optical Center)। 

 

Content added By
Content updated By

উত্তল এবং অবতল আয়না আলোচনা করার সময় আমরা প্রথমে উত্তল আয়না নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। লেন্সের বেলায় আমরা প্রথমে অবতল লেন্স নিয়ে আলোচনা করি। কারণ উত্তল আয়নায় যে ধরনের প্রতিবিম্ব তৈরি হয় অবতল লেন্সে সেই একই ধরনের প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। 

উত্তল আয়নার বেলায় আমরা দেখেছিলাম সেখানে সমান্তরাল আলো পড়লে সেটি প্রতিফলিত হবার সময় চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অবতল লেন্সের বেলাতেও ঠিক এই ধরনের ব্যাপার ঘটে। এই লেন্সে সমান্তরাল আলো পড়লে প্রতিসরিত হবার সময় সেটি ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিসরিত আলোগুলো যদি আমরা পেছনের দিকে বাড়িয়ে নিই তাহলে মনে হবে সেগুলো বুঝি একটি বিন্দু থেকে সোজা ছড়িয়ে পড়ছে। সেই বিন্দুটিকে বলে ফোকাস বিন্দু এবং লেন্সের কেন্দ্র থেকে এই ফোকাস পয়েন্টের দূরত্বটিকে বলে ফোকাস দূরত্ব। 

উত্তল আয়নার বেলায় আমরা শুধু এক দিক থেকে আয়নার ওপর আলো ফেলতে পারতাম। লেন্সের বেলায় দুই দিক থেকেই আলো ফেলা যায়। প্রত্যেকটা লেন্সের একটা ফোকাস দূরত্ব থাকে। আলো যেদিক দিয়েই ফেলা হোক তার ফোকাস দূরত্ব সমান থাকে। সমান্তরাল আলো ফেলা হলে সেটি ছড়িয়ে পড়ে এবং মনে হয় সেটি বুঝি ফোকাস বিন্দু থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। আলোক রশ্মির গতিপথ উল্টো করে দিলে এটি যেদিক দিয়ে এসেছে ঠিক সেদিক দিয়ে ফিরে যায়। তাই অবতল লেন্সের ছড়িয়ে যাওয়ার আলোর গতিপথ কোনোভাবে উল্টো করে দিতে পারলে সেটি সমান্তরাল হয়ে উল্টো দিকে বের হয়ে যাবে। (চিত্র 9.19)

অবতল লেন্সে কীভাবে প্রতিবিম্ব তৈরি হয় সেটি বোঝার জন্য আলোক রশ্মি অবতল লেন্সে কীভাবে প্রতিসরিত হয় সেটি জানতে হবে। সেটি নির্ভর করে আলোক রশ্মি কী কোণে অবতল লেন্সে এসে পড়ছে তার উপর। আমরা তিনটি বিশেষ আলোক রশ্মির প্রতিসরণের নিয়ম জানলেই কীভাবে প্রতিবিম্ব তৈরি হয় সেটি ব্যাখ্যা করতে পারব : 

(i) আলোক রশ্মি কেন্দ্রমুখী হলে সেটি প্রতিসরণের পর সোজাসুজি চলে যায়। 

(11) প্রধান অক্ষের সমান্তরাল রশ্মিটি প্রতিসরণের পর মনে হবে যেন রশ্মিটি ফোকাস বিন্দু  থেকে আসছে। 

(iii) আলোক রশ্মির দিক পরিবর্তন করা হলে এটি যেদিক থেকে এসেছে ঠিক সেদিক দিয়ে ফিরে যায়। কাজেই কোনো আলোক রশ্মি ফোকাস অভিমুখী হলে সেটি প্রধান অক্ষের সাথে সমান্তরাল হয়ে প্রতিসরিত হবে। 

আমরা এখন ইচ্ছে করলে অবতল লেন্সে একটা বস্তুর প্রতিবিম্ব কেমন হবে সেটা বের করতে পারি। ধরা যাক একটা বস্তু XY একটা অবতল লেন্সের কাছে রাখা হয়েছে। (চিত্র 9.20) বিশ্লেষণটি সহজ করার জন্য ধরে নিয়েছি বস্তুটির Y বিন্দুটি লেন্সের মূল অক্ষ YR এর উপরে। বস্তুটির কোন বিন্দুর প্রতিবিম্বটি কোথায় হবে সেটি বের করার জন্য সেই বিন্দু থেকে অন্তত দুটি রশ্মি আঁকা দরকার। 

 

চিত্র 9.20: অবতল লেন্সে একটি বস্তুকে ছোট দেখায়। 

Y বিন্দু থেকে দুটি রশ্মি না এঁকেও আমরা প্রতিবিম্বটি বের করতে পারব। Y বিন্দু থেকে YR অক্ষ বরাবর একটি রশ্মি আঁকা সম্ভব, তাই আমরা জানি Y বিন্দুটির প্রতিবিম্ব এই অক্ষের ওপর তৈরি হবে। X বিদুটির প্রতিবিম্ব থেকে অক্ষের ওপর লম্বটি এঁকে নিলেই আমরা Y বিন্দুর প্রতিবিম্ব পেরে যাব। 

X বিন্দু থেকে দুটি রশ্মি কল্পনা করি, একটি অক্ষের সাথে সমান্তরাল XP সেটি লেন্স থেকে বের হওয়ার সময় ছড়িয়ে যাবে এবং যেহেতু মনে হবে ফোকাস থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে তাই ফোকাস F থেকে P পর্যন্ত একটি রেখা টেনে বর্ধিত করলেই সেই রশ্মিটি পেয়ে যাব। দ্বিতীয় রশ্মিটি x বিন্দু থেকে লেন্সের কেন্দ্রের দিকে এঁকে নিই। পাতলা লেন্সের নিয়ম অনুযায়ী এটি সরাসরি XT দিকে বের হয়ে যাবে। XT এবং PS রেখা দুটি যে বিন্দুতে ছেদ করবে সেটিই হচ্ছে X এর প্রতিবিম্ব X, X' থেকে অক্ষের ওপর লম্ব আঁকলে আমরা XY এর প্রতিবিম্ব X'Y' পেয়ে যাব। 

উত্তল আয়নার বেলায় আমরা যা দেখেছিলাম অবতল লেন্সের প্রতিবিম্বের বেলাতেও সেটি সত্যি 

(a) এটার অবস্থান হবে লেন্সের কেন্দ্র এবং ফোকাস বিন্দুর মাঝখানে 

(b) এটা অবাস্তব 

(c) এটা সোজা এবং এটা 

(d) ছোট। 

Content added By
Content updated By

উত্তল লেন্সের প্রতিবিষগুলো অনেক চমকপ্রদ। অবতল আয়নায় আমরা যে ধরনের প্রতিবিম্ব পেয়েছিলাম উত্তল লেন্সে ঠিক সেই একই ধরনের প্রতিবিম্ব পাওয়া যায়। অবতল আয়নায় আমরা দেখেছিলাম তার ওপর সমান্তরাল রশ্মি ফেলা হলে সেটি ফোকাস বিন্দুতে এসে কেন্দ্রীভূত হয়। উত্তল লেন্সেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটে, সমান্তরাল রশ্মি ফেলা হলে সেগুলো এই লেন্সের ফোকাস বিন্দুতে কেন্দ্ৰীভূত হয় এবং তারপর আবার ছাড়িয়ে যায়।কাজেই আগের যুক্তি ব্যবহার করে বলা যায় যদি কোনো বিন্দু থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয় এবং একটা উত্তল লেন্সের ফোকাস বিন্দুতে সেই বিচ্ছুরিত ভালো উৎসটাকে রাখা যার তাহলে আলোটা লেন্সের ভেতর দিয়ে যাবার সময় সমান্তরাল রশ্মি হয়ে যাবে। (আলোর বেলায় এটি সব সময় সত্যি, এটি যদি A থেকে B তে যায় তাহলে রশ্মির দিক পরিবর্তন করে দিলে এটি সব সময় B থেকে A তে যাবে।) এখন আমরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে একটা বস্তু থাকলে তার প্রতিবিম্ব কোথায় হবে সেটি বের করে ফেলি। 

সেটি শুরু করার আগে আমরা আলোক রশ্মি উত্তল লেন্সে কীভাবে প্রতিসরিত হয় সেটি জেনে নিই। উত্তল লেন্সে তিনটি বিশেষ আলোক রশ্মির প্রতিসরণের নিয়ম জানলেই কীভাবে প্রতিবিম্ব তৈরি হয় সেটি ব্যাখ্যা করতে পারব : 

(1) আলোক রশ্মি কেন্দ্ৰমূখী হলে সেটি প্রতিসরণের পর সোজাসুজি চলে যায়।

(ii) প্রধান অক্ষের সমান্তরাল রশ্মিটি প্রতিসরণের পর ফোকাস বিন্দু  দিয়ে যাবে

(iii) আলোক রশ্মির দিক পরিবর্তন করা হলে এটি যেদিক থেকে এসেছে ঠিক সেদিক দিয়ে ফিরে যায়। কাজেই কোনো আলোক রশ্মি ফোকাস দিয়ে গেলে সেটি প্রধান অক্ষের সাথে সমাস্তরাল হয়ে  প্রতিসরিত হবে। 

এবারে আমরা উত্তল লেন্সের জন্য প্রতিবিম্ব তৈরি করতে পারব। 

ফোকাস দূরত্ব থেকে কম দূরত্ব 

   

চিত্র 9.23: ফোকাস দূরত্বের ভেতরে বস্তু রাখা হলে উত্তল লেন্সে বড় প্রতিবিম্ব দেখা যায়। 

প্রথমে ধরা যাক একটি বস্তু XY কে লেন্স এবং তার ফোকাস বিন্দুর F মাঝখানে রাখা হলো। (চিত্র 9.04) আগে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ঠিক সেই একই যুক্তিতে বলতে পারি Y বিন্দুর প্রতিবিম্বটি YOF অক্ষ রেখার ওপর হবে। X বিন্দুটির প্রতিবিম্ব X' থেকে এই অক্ষের ওপর লম্ব আঁকা হলেই আমরা Y এর প্রতিবিম্বের অবস্থান পেরে যাব। 

এবারে x বিন্দু থেকে দুটি রশ্মি আঁকি, অক্ষের সাথে সমান্তরাল XC রেখাটি ফোকাস বিন্দু F এর ভিতর দিয়ে T এর দিকে যাবে। x বিন্দু থেকে রশ্মি লেন্সের কেন্দ্রবিন্দু দিয়ে আঁকা হলে সেটি সোজা সরলরেখায় XO হয়ে $ এর দিকে যাবে। দেখতেই পাচ্ছ CFT এবং XOS রেখা দুটি সামনে গিয়ে মিলিত হতে পারবে না। যার অর্থ বাস্তব প্রতিবিম্ব তৈরি হবার কোনো সুযোগ নেই। রেখা দুটো পেছন দিকে বাড়িয়ে দিলে যে X' বিন্দুতে মিলিত হবে সেটাই X বিন্দুর প্রতিবিম্ব। 

এই বিন্দু থেকে YF রেখার উপর লম্ব আঁকা হলে Y' বিন্দুতে স্পর্শ করে সেটা Y বিন্দুর প্রতিবিম্ব। 

দেখাই যাচ্ছে XY বস্তুটি যতই লেন্সের কাছাকাছি আনা হবে প্রতিবিম্বটি ততই বড় হতে থাকবে। আবার বস্তুটি যতই ফোকাস বিন্দু F এর কাছাকাছি আনা হবে প্রতিবিম্বটি ততই বড় হতে থাকবে। বস্তুটি যখন ঠিক ফোকাস বিন্দু F এর ওপর হবে তখন প্রতিবিম্বটির আকার হবে অসীম। আমরা এখন বলতে পারি যদি একটা উত্তল লেন্সের কেন্দ্রবিন্দু এবং ফোকাস বিদুর মাঝখানে একটি বস্তু রাখা হয় তাহলে বস্তুটির প্রতিবিম্ব 

(a) যে দিকে বস্তুটি রয়েছে সেই দিকেই তৈরি হবে 

(b) প্রতিবিম্বটি হবে অবাস্তব 

(c) সোজা এবং 

(d) বড়। 

 

ফোকাস দূরত্বের বাইরে

এবারে আমরা দেখি বস্তুটি ফোকাস দূরত্ব থেকে বাইরে রাখলে কী হয়। অবতল আয়নার মতো এখানেও তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয় হতে পারে। (1) বস্তুটি ফোকাস দূরত্বের বাইরে কিন্তু দ্বিগুণ ফোকাস দূরত্বের ভেতরে (ii) বস্তুটি দ্বিগুণ ফোকাস দূরত্বের বাইরে এবং (iii) বস্তুটি ঠিক দ্বিগুণ ফোকাস দূরত্বে। একটি একটি করে দেখা যাক। 

 

(i) প্রথমে বস্তুটিকে ফোকাস দূরত্বের বাইরে কিন্তু ফোকাস দূরত্বের দ্বিপুণ দৈর্ঘ্যের ভেতরে রাখা হবে। 9.24 চিত্রটিতে XY বস্তুটির Y বিদুর প্রতিবিম্বটি YO রেখার উপরে হবে তাই আগের মতো আমরা শুধু X বিন্দুটির প্রতিবিম্ব বের করি। x বিন্দু থেকে অক্ষের সাথে সমান্তরাল রশ্মিটি ফোকাস বিন্দু F এর ভেতর দিয়ে যাবে। লেন্সের কেন্দ্রবিন্দু দিয়ে অন্য একটি রশ্মি XO সরলরেখায় যাবে। দুটি রেখা যেখানে ছেদ করবে সেই X বিন্দুটি হচ্ছে X এর প্রতিবিম্ব। X' থেকে অক্ষ YO রেখার ওপর লম্ব আঁকা হলে Y' বিন্দুটি হবে Y এর প্রতিবিম্বের অবস্থান। কাজেই XY' হচ্ছে XY এর প্রতিবিম্ব।

 

     চিত্র 9.24: ফোকাস দূরত্বের বাইরে কিন্তু দ্বিগুণ ফোকাস দূরত্বের ভেতরে বস্তু রাখা হলে তার বাস্তব উল্টো বড় প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। 

 

অর্থাৎ এই প্রতিবিম্বের জন্য আমরা বলতে পারি : 

(a) প্রতিবিম্বটির অবস্থান হবে ফোকাস দূরত্বের দ্বিপুণ দূরত্বের বাইরে 

(b) বাস্তব (c) উল্টো 

(d) এবং বস্তুর আকার থেকে বড় 

 

(ii) এবারে আমরা দেখি বস্তুটি ফোকাস দূরত্বের ঠিক দ্বিগুণ দূরত্বে রাখা হলে কী হয়। দেখতেই পাচ্ছি XY বস্তুটি যদি ঠিক ফোকাস দূরত্বের দ্বিপুণ দুরত্বে (চিত্র 9.25) রাখা হয় তাহলে প্রতিবিম্বটির আকার হবে XY বস্তুটির সমান এবং প্রতিবিম্বটির অবস্থান হবে লেন্সের কেন্দ্র থেকে ঠিক সমান দূরত্বে। বস্তুটি যতই ফোকাস বিন্দুর কাছাকাছি আনা হতে থাকবে প্রতিবিম্বটি ততই দূরে তৈরি হবে এবং তার আকার বড় হতে থাকবে। যেহেতু এই প্রতিবিম্বের ভেতর দিয়ে সত্যিকার আলোক রশ্মি যায় ভাই এটি বাস্তব প্রতিবিম্ব এবং ছবিটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে প্রতিবিম্বটি উল্টো   

 চিত্র 9.25: ঠিক ফোকাস দূরত্বের দ্বিগুণ দুরত্বে কোনো বস্তু রাখা হলে তার প্রতিবিম্বটি হবে বস্তুটির সমান

 

অর্থাৎ: 

(a) প্রতিবিম্বটির অবস্থান হবে ফোকাস দূরত্বের দ্বিগুণ দূরত্বে 

(b) বাস্তব

(c) উল্টো 

(d) এবং বস্তুর সমান 

 

(iii) এখন আমরা দেখি বস্তুটি যদি ফোকাস দূরত্বের ত্রিগুণ দুরত্বের বাইরে থাকে তাহলে তার কী ধরনের প্রতিবিম্ব কোথায় তৈরি হয়। এই প্রতিবিম্বটি আঁকার পদ্ধতি ঠিক আগেরটির মতো শুধু (চিত্র 9.26) বস্তুটিকে বসাতে হবে ফোকাস দূরত্বের দ্বিগুণ দূরত্বের বাইরে। আমরা আগেই বলেছি বস্তুটি যদি ফোকাস দূরত্বের দ্বিগুণ দূরত্বে রাখা হয় তাহলে তার সমদূরত্বে সমান আকারের একটা প্রতিবিম্ব তৈরি হয়। যতই বস্তুটা দূরে সরিয়ে নেওয়া হতে থাকে প্রতিবিম্বটি ততই ছোট হতে থাকে এবং ফোকাস বিন্দুর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। বস্তুটি যদি অসীম দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে তার প্রতিবিম্বটি তৈরি হবে ঠিক ফোকাস বিন্দুতে।

      

চিত্র 9.26:দ্বিগুণ ফোকাস দূরত্বের বাইরে বস্তু রাখা হলে তার ছোট উল্টো বাস্তব প্রতিবিম্ব তৈরি হয়

 

কাজেই ফোকাস দূরত্বের দ্বিগুণ দূরত্বের বাইরে কোনো বস্তু রাখা হলে বস্তুটির 

(a) প্রতিবিম্বের অবস্থান হয় ফোকাস দূরত্ব এবং ফোকাস দূরত্বের দ্বিগুণ দূরত্বের মাঝখানে 

(b) বাস্তব

(c) উল্টো 

(d) ছোট। 

 

Content added By
Content updated By

লেন্সের সবচেয়ে প্রচলিত ব্যবহার আমরা দেখি চশমার মাঝে। তোমরা যদি বিভিন্ন মানুষের চশমার লেন্স পরীক্ষা করে দেখো তাহলে দেখবে কারো কারো চশমার লেন্স তৈরি হয় উত্তল লেন্স দিয়ে, কারো কারো চশমার লেন্স তৈরি হয় অবতল লেন্স দিয়ে। আমরা লেন্সগুলোকে প্রায় সময়ই পাওয়ার দিয়ে ব্যাখ্যা করি। তোমরা নিশ্চয়ই বলেছ কিংবা বলতে শুনেছ, অমুকের চশমার পাওয়ার অনেক বেশি। পাওয়ার কথাটি দিয়ে আমরা কী বোঝানোর চেষ্টা করি? 

পাওয়ারের ধারণাটি এসেছে লেন্স দিয়ে বড় এবং ছোট দেখার ব্যাপারটি থেকে। দুটি উত্তল লেন্স দিয়ে যদি একটি জিনিসকে লেন্সের কাছাকাছি একই দূরত্বে রেখে দেখি এবং একটি লেন্সে জিনিসটি অন্য লেন্সটি থেকে বড় দেখায় তাহলে যে লেন্সটিতে বড় দেখায় আমরা বলি সেই লেলের পাওয়ার বেশি। তোমরা একটু চিন্তা করলেই দেখবে আসলে যে লেন্সের ফোকাস দূরত্ব যত কম সেই লেন্সে জিনিসটিকে তত বড় দেখাৰে।(চিত্র 9.27)

কাজেই লেন্সের পাওয়ার P হচ্ছে ফোকাস দূরত্বের ব্যস্তানুপাতিক। যদি ফোকাস দূরত্ব f মিটারে দেওয়া হয় তাহলে পাওয়ার P এর একক ডায়াপার। অর্থাৎ তোমার পরিচিত কারো চশমার পাওয়ার যদি হয় 2.5 (সাধারণ কথাবার্তায় ডায়াপটার শব্দটা কেউ ব্যবহার করে না।) তাহলে তার চশমার লেন্সের ফোকাস দূরত্ব হবে

                                    f=1P=12.5m=0.4 m (এককটি মিটারে) 

পাওয়ারের ধারণাটি শুধু উত্তল লেন্সের বড় দেখানোর জন্য নয়। অবতল লেন্সে ছোট দেখানোর সময়ও একই পাওয়ার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। যে অবতল লেন্সে কস্তুকে (সমান দূরত্বে) যত ছোট দেখা যাবে বুঝতে হবে তার পাওয়ার তত বেশি বা ফোকাস দূরত্ব তত ছোট। উত্তল লেলের বেলায় পাওয়ার ধনাত্মক বা পজিটিভ, অবতল লেন্সের বেলায় পাওয়ার ঋণাত্মক বা নেগেটিভ এটাই হচ্ছে পার্থক্য। 

Content added By
Content updated By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.